ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং

ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং কী?

ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং – বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল ব্যাকার সমস্যা। প্রতিবছর যতলোক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার জন্য উপযোগী হয়, তার তুলনায় খুব সামান্য পরিমাণই র্কমসংস্থানের ব্যবস্থা আছে এই দেশে। বিপুল পরিমাণ বেকারের সিংহভাগই হলো উচ্চশিক্ষিত। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষনা প্রতিষ্ঠানের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের ৬৬ শতাংশই শিক্ষিত বেকার।

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। এছাড়াও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য মতে, আমাদের দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে শিল্প কারখানা এবং কৃষিক্ষেত্রে। তবে বাংলাদেশের মানুষ কৃষিজীবী হলেও, বর্তমান কালের আধুনিক সমজ ব্যবস্থায় কৃষি এবং শিল্প কাজকে ছোট করে দেখা হয়।

ফলে শিক্ষিত বেকারা এসব কাজ করতে চায় না, এবং অন্যদিকে তারা চাকরীও পাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধানের একমাত্র মোক্ষম সমাধান হল ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোসিং। পরিশ্রম ও সেই সাথে দৃঢ় সংকল্প করার মানসিকতা থাকলে, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি সেরা ক্যারিয়ার গড়ে তুলা সম্ভব।

ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে আরেকটি বিষয় ওতোপ্রোতভাবে জড়িত, আর সেটি হল আউটসোর্সিং। আজকে আপনারা এই ব্লগের মাধ্যমে জানতে পারবেন, ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং কী, ফ্রিল্যান্সিং করে কত আয় করা যায়, বেকার সমস্যার সমাধান ফ্রিল্যান্সিং কতটা ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং কী?

অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং সামর্থক শব্দ বলে মনে করেন। কিন্তু কর্মের দিক থেকে বিষয় দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী। বিভিন্ন ধরনের আউটসোর্সিংয়ের চাহিদায় হল ফ্রিল্যান্সিং। যেমন- যারা কারো অধিনে চাকরি না করে চুক্ত অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। তাই ফ্রিল্যান্সারকে বলা যাই, একটি স্বাধীন পেশাজীবী বা মুক্তপেশা

  "Your Guide to Choosing the Best Family Medical Center"

অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সারদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়াই হল আউটসোর্সিং। আর জিনি এই কাজ করে থাকেন তাকে বলা হয় Outsource Contractor. সাধারণত যারা চাকরির ধোরাবাঁধা নিয়ম মানতে চান না তাদের জন্য তাদের জন্য উপার্জনের এক চমৎকার মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং।

বর্তমানে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বচ্চো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকে। কিন্তু অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা উপার্জন করা যায়। মনে করুন, জাপানের একজন ব্যক্তি ব্যাবসায়ের জন্য একটি ওয়েবসাইট খুলতে চাই। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে কোন ওয়েব ডেভেলপার নেই। তখন তার জন্য সবচেয়ে সহজ হল ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দেওয়া।

বাংলাদেশে বহু ফ্রিল্যান্সার এভাবে অনলাইনে চুক্তি ভিত্তিক কাজ করে রিতিমত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সমপরিমাণ, বা তার চেয়েও বেশি অর্থ আয় করছে। এখন প্রশ্ন হল, এইসব কাজ কোথায় পাওয়া যাই। এক কথাই এর উত্তর হল মার্কেটপ্লেস। ফ্রিল্যান্সার ও তাদের ক্লাইন্ডদের মধ্যে কাজ আদান প্রদানের জায়গা হল মার্কেটপ্লেস। আর এই মার্কেটপ্লেস বলা হয় কাজের বাজার।

Fiverr, Upwork, Freelancer ডট কমের মত বহু অনলাইন প্লাটফর্মে, আউটসোর্স কন্ট্রাক্টরা তাদের কাজের চাহিদা দেয়। ফ্রিল্যান্সাররা সেখান থেকে তাদের কাজের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ খুজে নেয়। প্লাটফর্মভেদে কাজের ধরন ভিন্নতা রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং করে কত আয় করা যায়?

বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করছে। বাংলাদেশে আইসিটি ডিভিশনে এক জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রায় ৫ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার আছে। যাদের গড় মাসিক আয় প্রায় ৪০,০০০ হাজারেরও বেশি। তবে একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার প্রতিমাসে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। যদি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন প্রদান করা হয় তবে, বাংলাদেশের আরও বহু মানুষে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। চাকরি প্রত্যাসী, উদ্যেক্তা, ছাত্রছাত্রী এবং গৃহিনীরা চাইলেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।

  The Benefits of Weight Loss Surgery in Dallas, Tx

বর্তমানে কয়েকটি ফ্রিল্যান্সিং কাজের ধরণ হল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, মোশন গ্রাফিক্স, 2D 3D Animation ইত্যাদি।

সাধারণত চাকুরিজীবীদের ফ্রিল্যান্সারদের কোন নির্দিষ্ট বেতন নেই, একজন ফ্রিল্যান্সার কত টাকা আয় করবে তা তার কাজের ধরণ দক্ষার উপর নির্ভর করে। যদি আপনি এই সম্পর্কে আরও স্বচ্ছ ধারণা পেতে চাইলে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলে ওয়েব সাইটগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন। এতে করে কাজের ধরণ ও পারিশ্রমিক সম্পর্কে একটি তুলনামূলক ধারণা চলে আসবে।

এক একটি কাজের বিনিময়ে সাধারণত ৫-১০০ ডলার আয় করা সম্ভব। তবে ফ্রিল্যান্সার তার কাজের ক্ষেত্রে দক্ষ হলে তার পারিশ্রমিক বহুগুনে বেড়ে যাই। বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করার পদ্ধতি দেখায়, এই সাইটের মাধ্যমে সাময়িক কিছু টাকা পাওয়া গেলেও এগুলো কখনোয় আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন না।

যদি আপনি নিজেকে দক্ষ পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই কোন একটি নির্দিষ্ট কাজে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জন করে শুধু ফ্রিল্যান্সিংই নয় আপনি চাইলে নিজের ব্যাবসাও গড়ে তুলতে পারবেন।

বেকার সমস্যার সমাধান ফ্রিল্যান্সিং

বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারদের প্রধান সমস্যা হল তাদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার সার্টিফিকেট থাকলেও কোন বিশেষ কাজের দক্ষতা নেই। তবে এর জন্য বাংলাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকাংশে দায়ি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন সব পড়ানো হয় যার সঙ্গে চাকরি বাজারের কোন সংযোগ নেই। প্রতিবছর প্রায় ৪-৫ লক্ষ শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করছে।

  5 Essential: Skills for a Successful Computer Consulting Career

বাংলাদেশ এক উন্নয়ন গবেষণায় উঠে এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পাশ করা, ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার থাকছে। প্রতিবেশি অন্যান্য দেশের স্নাতক বেকারের হার যথাক্রমে ভারতে ৩৩%, পাকিস্তান ২৮%, নেপাল ২০%, শ্রীলঙ্কা ৮% এক বছর আগের এই তথ্যেই বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বচ্চো।

এক বছর পরে এসে এই সময়ে বেকার সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষিত তরুন নিজের কর্মসংস্থান নিজেই তৈরি করছে। ফলে তারা উদ্যেক্তা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে যেহেতু সর্বচ্চো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অর্জন করেও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাই ফ্রিল্যান্সিং বেকার সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং করে সাবলম্বি হতে চাইলে দক্ষতা অর্জনে কোন বিকল্প নেই।

সর্বশেষ কিছু কথা – ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং

বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে ফ্রিল্যান্সিং বিষয় সম্পর্কে কাজ করে থাকে, এছাড়া আপনি চাইলে যেকোনো আইটি সেক্টর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনিও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেন। একটি কথা মনে রাখবেন বাংলাদেশে দিন দিন ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও দেশে বেকারের বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বসে না থেকে নিজে কিছুর করার চেষ্টা করুন যাকে বলা হয় কর্মসংস্থান। আর আপনার জন্য কর্মসংস্থানের সবথেকে ভালো মাধ্যম হলো ফ্রিল্যান্সিং।

আপনাদের যদি ব্লগটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছু জানার থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুন আশা করি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top