প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম

প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম (সম্পূর্ণ গাইড)

নমস্কার বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আজকে আপনাদের সাথে শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাই আজকের টপিকের বিষয় হল প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম এবং কিভাবে প্রবন্ধ রচনা লিখতে হবে সে সম্পর্কে এ টু জেট আলোচনা করা হবে। আশা করি আজকের টপিকটি সকল শিক্ষার্থী বন্ধুদের উপকারে আসবে। চলুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।

প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম

অনেক শিক্ষার্থী প্রবন্ধ রচনা লিখতে পারে না তবে প্রবন্ধ রচনা লেখার কিছু নিয়ম রয়েছে। আর এই নিয়ম মেনে প্রবন্ধ রচনা লিখলে আপনি হয়তো পরীক্ষায় একটু বেশি নাম্বার পেতে পারেন। এছাড়াও রচনা লেখার উপর আপনার কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যাতে করে আপনি সঠিক নিয়মে প্রবন্ধ রচনা লিখতে পারবেন।

তাই আজকে আপনাদের প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম এ বিষয়ের উপর কিছু কৌশল প্রদান করবো। আপনারা ব্লগটি এ টু জেট পড়ুন।

প্রবন্ধ রচনা কী? এবং রচনা’ শব্দের অর্থ

রচনা বলতে প্রবন্ধ রচনাকে বোঝায়।

‘রচনা’ শব্দের অর্থ কোনোকিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোন বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তোলার নামই রচনা। রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা , চিন্তার ধারাবাহিকতা , সংযত বর্ণনা , ভাষার প্রঞ্জলতা ও যুক্তির সুশৃঙ্খল প্রয়োগ থাকে। লেখকের চিন্তা, কল্পনা ও বুদ্ধির মিলিত প্রয়াসে রচনা উৎকৃষ্ট হয়ে ওঠে।

‘প্রবন্ধ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন। ‘প্রকৃষ্ট বন্ধন’ বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বোঝায়। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকে প্রবন্ধ বলে। প্রবন্ধ রচনার বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষার্থীদের বেলায় রচনা ও প্রবন্ধ কথাটি সমার্থক। শিক্ষার্থীদের রচনায় নতুন কোনো ভাব বা তত্ত্ব থাকে না। একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা মনের ভাব বা বক্তব্যকে প্রকাশ করে। রচনা বা প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারে । এতে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলার দক্ষতা জন্মে।

  ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার | (A to Z) বিস্তরিত আলোচনা

বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য যথার্থ শব্দ প্রয়োগ এবং উপমা, অলংকার ইত্যাদির ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষর্থী সচেতন হয়ে উঠে। প্রকাশের জড়তা কাটিয়ে ওঠা ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবন্ধ-রচনার অনুশীলন প্রয়োজন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্বের স্বাধীনতা প্রকাশের জন্য প্রবন্ধ-রচনা অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই।

রচনার বিভিন্ন অংশ

রচনার প্রধান অংশ হল তিনটি

১. ভূমিকা
২. বিষয়বন্তু
৩. উপসংহার

১. ভূমিকা: এটি রচনার প্রবেশপথ । একে সূচনা, প্রারম্ভিকা বা প্রাক-কথনও বলা চলে। এতে যে বিষয়ে রচনা হবে, তার আভাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় । ভূমিকা সংক্ষিপ্ত হওয়াই উচিত।

২. বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য: বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ। এ অংশে রচনার মূল বিষয়বস্তুর সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্ট করতে হয়। বিষয় বা ভাবকে পরিস্ফুট করার জন্য প্রয়োজনে ছোট ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, অনুচ্ছেদগুলোর ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য এ অংশে প্রয়োজনে উদাহরণ, উপমা, উদ্ধৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।

৩. উপসংহার: বিষয়বস্তু আলোচনার পর এ অংশে একটা সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন হয় বলে এটাকে ‘উপসংহার’ নামে অভিহিত করা হয়। এখানে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত বা অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

রচনার শ্রেণিবিভাগ কয়টি

বিষয়বস্তু অনুসারে রচনাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

ক. বর্ণনামূলক রচনা
খ. চিন্তামূলক রচনা।

বর্ণনামূলক রচনার সাধারণত স্থান, কাল, বস্তু, ব্যক্তিগত স্মৃতি-অনুভূতি ইত্যাদি বিষয়ে হয়ে থাকে। ধান, পাট, শরৎকাল, কাগজ, টেলিভিশন, বনভোজন, শৈশবস্মৃতি ইত্যাদি রচনা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। চিন্তামূলক রচনায় থাকে সাধারণত তত্ত্ব, তথ্য, ধ্যান-ধারণা, চেতনা ইত্যাদি শ্রমের মর্যাদা, বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার, পরিবেশদূষণ, অধ্যবসায়, সত্যবাদিতা, চরিত্র গঠন প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনার মধ্যে পড়ে।

প্রবন্ধ-রচনার কৌশল

১. বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি, রং, ধ্বনি, স্বাদ, গন্ধ, অনুভূতি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে ছবির মতো ফুটিয়ে তুলতে হয়।

  ওয়ালটন ফ্রিজ ১২ সেফটি দাম কত? - নতুন মূল্য তালিকা

২. বর্ণনামূলক রচনা লেখার সময় সময়সীমা এবং পরিসরের কথা মনে রেখে বিশেষ কিছু দিক বেছে নিতে হয়। সেগুলির সাহায্যে মূল বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয়।

৩. রচনা লেখার সময় পরম্পরা বা ধারাবাহিকতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। চিন্তাগুলো যেন এলোমেলো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। জানা বিষয় ছাড়াও অনেক সময় অজানা বিষয় নিয়ে রচনা লিখতে হতে পারে। বিষয়ের ধারণাগুলো একটির পর একটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ভাবের কোনো অসংগতি না থাকে।

৪. শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রচনার আকার সাধারণত নির্দিষ্ট পরিসরের হয়ে থাকে। পরিমিত পরিসরে তাই রচনার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অযথা বিষয়কে প্রলম্বিত করা ঠিক নয়। অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। এক কথায় রচনা খুব ছোট বা খুব বড় হওয়া উচিত নয়।

৫. প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সন্ধি, সমাসবদ্ধ পদ, অপরিচিত বা অপ্রচলিত শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করা ভালো। বাগাড়ম্বর বা অলংকারবহুল শব্দ ব্যবহার করা হলে অনেক সময় বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষারীতির মাধ্যমে রচনাকে যথাসম্ভব রসমন্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করতে হয়।

প্রবন্ধ রচনায় দক্ষতা অর্জনের উপায়

প্রবন্ধ রচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর নিয়মিত অনুশীলন দরকার। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো সহায়ক হতে পারে :

১. প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর প্রবন্ধ বা রচনা পড়তে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ, সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে নানা বিষয়ে ধারণা জন্মায় এবং শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়। এতে লেখা সহজ হয়ে ওঠে।

২. প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। প্রবন্ধের মর্মবস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ, প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই। একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

৩. ভাষারীতিতে সাধু এবং চলিত যেন মিশে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অযথা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য, উদ্ধৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়।

  ওয়ালটন ফ্রিজ ১২ সেফটি দাম কত? - নতুন মূল্য তালিকা

৪. প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও নিজের বক্তব্যকে আরো জোরালো করার জন্য প্রবাদ-প্রবচন, কবিতার পঙক্তি উদ্ধৃতি ইত্যাদি সন্নিবেশ করা চলে।

৫. নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, চিন্তাশক্তি, পঠন-পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপনা কৌশল ইত্যাদি প্রয়োগ করে প্রবন্ধকে যথাসম্ভব হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করা উচিত।

সচারচার প্রশ্নের উত্তর

১. প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম কি?
উত্তর: প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি, রং, ধ্বনি, স্বাদ, গন্ধ, এই বিষয়গুলো মাধ্যমে রচনাকে ফুটিয়ে তোলা এবং খেয়াল রাখতে হবে প্রবন্ধ যেন খুব বেশি বড় বা ছোট না হয়। এছাড়াও প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

২. কিভাবে প্রবন্ধ লেখা শুরু করব?
উত্তর: প্রথমে আপনি প্রবন্ধের জন্য একটি রূপরেখা বা পরিকল্পনা তৈরি করুন। এটি আপনাকে আপনার চিন্তাগুলিকে সংগঠিত করতে এবং ধারণাগুলির একটি যৌক্তিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। আপনার পরিকল্পনাতে একটি ভূমিকা, মূল অনুচ্ছেদ এবং একটি উপসংহার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

৩. একটি রচনা কতক্ষণ হওয়া উচিত?
উত্তর: একটি প্রবন্ধ রচনার দৈর্ঘ্য প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। যাইহোক, বেশিরভাগ রচনা সাধারণত ৫০০ থেকে ২০০০ শব্দের মধ্যে হয়।

৪. একটি প্রবন্ধ লেখার সময় আমি আটকে থাকলে আমার কী করা উচিত?
উত্তর: একটি ছোট বিরতি নিন, চিন্তাভাবনা করুন, বা সেই বিষয়ের উপর ভাবতে থাকুন। কখনও কখনও, অস্থায়ীভাবে আপনার প্রবন্ধ থেকে দূরে সরে যাওয়া আপনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির এবং ধারণা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

উপসংহার

প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম – একটি প্রবন্ধ বা প্রবন্ধ লেখার জন্য একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির এবং নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে চলার প্রয়োজন। একটি সুগঠিত রূপরেখা তৈরি করুন যা আপনার প্রবন্ধের জন্য একটি রোডম্যাপ হিসাবে কাজ করবে।আকর্ষক ভূমিকা তৈরি করুন, এর পরে মূল অনুচ্ছেদগুলি যা সমর্থনকারী প্রমাণ এবং উদাহরণ প্রদান করে।

ব্যাকরণ এবং ভাষার ব্যবহারে মনোযোগ দিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক লেখা বজায় রাখুন। পরিশেষে, মূল পয়েন্টগুলি সংক্ষিপ্ত করে এবং আপনার থিসিস বিবৃতিকে শক্তিশালী করে আপনার প্রবন্ধটি শেষ করুন। এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে, আপনি বাংলায় আকর্ষণীয় প্রবন্ধ লেখার শিল্প আয়ত্ত করতে পারেন।

Related Post-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top