তক্ষক হল এক ধরণের বুনো টিকটিকি জাতীয় প্রাণী। তক্ষক দিয়ে চীনারা তাদের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরী করে, এবং বাংলাদেশেও তক্ষক দিয়ে এক ধরণের শান্ডার তেল নামক ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত একটি তক্ষকের দাম প্রায় ২০ কোটি টাকারও অধিক হতে পারে।
তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো তক্ষকের এত দাম হবার কারণ কি?, তক্ষক আসলে কী কাজে লাগে যারা এই বিষয় সম্পর্কে অবগত নয়, তাদের জন্য আজকের কনটেন্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। আশা করছি এটি তক্ষক সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। তাহলে চলুন বন্ধুরা যাক মূল আলোচনা।
তক্ষক কী ?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ছয়শত প্রজাতির তক্ষক রয়েছে। ইংরেজিতে তক্ষকে বলা হয় Tokay Gecko. একে অঞ্চলভেদে রক্তচোষা, আনজিলা এবং শান্ডা নামেও ডাকা হয়।
তক্ষক সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ সেমি বা ১২ ইঞ্জি এবং ওজন প্রায় ৪০০ গ্রাম হয়ে থাকে। তক্ষক সাধারণত ধূসর রঙের হয়ে থাকে, এবং এর উপর লাল লাল ফোটা থাকে। তবে পরিবেশ অণুযায়ী তাদের গায়ের রঙ পরিবর্তন করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বিটকয়েন মাইনিং কী এবং কীভাবে করা হয়?
পুরুষ তক্ষকের গায়ের রং স্ত্রী তক্ষকের তুলনায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এদের বিভিন্ন জাত থাকলেও প্রধানত দুই ধরনের তক্ষকের চাহিদা সবথেকে বেশি।
- মুরগী পা তক্ষক
- হাঁস পা তক্ষক
এদের পা অনেকটা মুরগি বা হাঁসের মতো বলে এমণ নামকরণ করা হয়েছে। তক্ষক মূলক নেশাচর প্রাণী, এরা গাছের গর্তে বাস করে এবং পোঁকামাকড়, পাখির ডিম, ছোট পাখি ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।
অনেকেই একে বিষাক্ত সরীসৃপ বলে মনে করেন। কিন্তু এরা মোটেও বিষাক্ত নয়। তবে এই প্রাণীটি বেশ আগরাশী।
তক্ষক মানুষকে কামড় দিলে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে।
তক্ষক এতো দামি কেন ?
ওজন ও বয়সভেদে এই প্রাণীটির দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তক্ষক চোরাকারবারের সিন্ডিকেটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ৩০০ গ্রাম তক্ষকের দাম ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে, যা বাংলাদেশী টাকায় হয় প্রায় ২০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা।এক্ষেত্রে হাঁস পা আলা তক্ষকের দাম একটু বেশি।
তক্ষকের প্রধান বাজার মূলত চীন। চীনসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় তক্ষককে সৌভাগ্য এবং উর্বরতা প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা ধারণা করে যে তক্ষক হলো ড্রাগণের বংশধর।
সাধারণত চীনা ঔষধ তৈরিতে তক্ষক ব্যবহার করা হয়। সেজন্যই তারা এত দামে তক্ষক কিনে থাকে। এছাড়াও অনেক দেশে মনে করা হয়, তক্ষক ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে। যদিও এটি একটি ভন্ডামী।
চীনারা মনে করে তক্ষকের বেশ কিছু ঔষধি গুনাগুন আছে। তবে বিজ্ঞানীদের কাছে এর কোন নির্ভরযোগ্য সত্যতা পাওয়া যায় নি। চীনারা ঐতিয্যবাহী কিছু ঔষধ তৈরিতে তক্ষকের জিহবা বা রক্ত ব্যবহার করে।
যে সমস্ত রোগের চিকিৎসায় তক্ষক ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে এইডস, ক্যান্সার, টিউমার অন্যতম।
বাংলাদেশের গ্রামীণ হাটবাজার ও শহরেও বিভিন্ন জায়গায় শান্ডার তেল নামে তক্ষকের তেল বিক্রি করা হয়। তাদের দাবি পুরুষের যৌনাঙ্গ ক্ষমতা বাড়াতে এই তেল কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু বাস্তবে এই প্রাণীর মধ্যে ঔষধ তৈরির তেমন কোনো উপাদান নেই। তাই মানুষের অন্ধবিশ্বাসের কারণে তক্ষক আজ বিলুপ্ত প্রায়।
তক্ষক বানিজ্য কী বৈধ ?
আন্তর্জাতিক ভাবেই তক্ষক কেনাবেচা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই বাংলাদেশেও তক্ষক কেনাবেচা বা অবৈধভাবে সংরক্ষণ করা আপরাধ।
তক্ষকের প্রধান বাজার খোদ চিনেও এই প্রাণীর বাণিজ্য অবৈধ। যেহেতু এটি একটি সংকটাপন্ন বন্য প্রাণী, তাই কোনভাবে এই প্রাণী ধরা পড়লে, দ্রুত তা প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা উচিত।
বাংলাদেশে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা তক্ষকের খোজ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই তেমন কোন লাভবান হয়নি, অনেকেই এটি খোজার পিছনে তাদের নিজেদের সম্পদ বিক্রি করে নির্শ্ব হয়েছেন।
এছাড়াও তক্ষক চোরাকারবারীরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। কারণ এই অপরাধ জগতে প্রতিনিয়ত মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
তাই এই ধরনের মলিন বিষয়ের পিছনে না ছুটে, অন্য কোন ভালো কাজে সময় ব্যয় করা উচিত। তক্ষকের মতো বনরুই নামক আরেকটি প্রাণী ঔষধ তৈরির অজুহাতে নির্মমভাবে শেষ করে ফেলা হচ্ছে।
তক্ষক নিয়ে যত প্রশ্ন
১। তক্ষক কামড়ালে কি হয় ?
উত্তরঃ সাধারণত তক্ষকের কামড়ালে তেমন কোন ক্ষতি নেই। তবে যদি কামড় দেয় সেখানে গরম পানি আর এন্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান দিয়ে ধুয়ে, তারপর এন্টিবায়োটিক দিয়ে ব্যান্ডেস করে জায়গাটা আবৃত করে রাখতে হবে।
২। তক্ষক এর দাম কত ?
উত্তরঃ ৩০০ গ্রাম তক্ষকের দাম ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা।
৩। তক্ষক চেনার উপায় ?
উত্তরঃ তক্ষকের পিঠের দিক ধূসর হয়ে থাকে, অথবা নীলচে ধূসর বা বেগুনি। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলি পাশাপাশি ৭-৮টি সরু সারিতে বিন্যস্ত।
সর্বশেষ কিছু কথা
তক্ষক এতো দামি কেন এই বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। তবে একটা কথা তক্ষক মানুষের তেমন কোন ক্ষতি করে না।
আপনাদের যদি ব্লগটি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। যদি তক্ষক সম্পর্কে কিছু জানার থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুন আশা করি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।