ঘরে বসে আয় করার ৫টি উপায় – বর্তমান যুগে ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের জীবনে যত সুবিধা এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হল ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের সুযোগ।
বিশেষ করে করোনা মহামারীর পর থেকে এই বিষয়টির সাথে আমরা সবাই পরিচিত হয়েছি। মহামারির ধকল কাটিয়ে বিশ্ব আবারো স্বাভাবিক হলেও, বহু মানুষ তাদের চাকরি বাদ দিয়ে, ঘরে থেকে নিজের মত করে কিছু করতে চেষ্টা করছেন।
ঘরে বসে আয় করার নানা উপায় রয়েছে। তবে কঠোর পরিশ্রম ও পরিকল্পনা মাধ্যমেই অনলাইনে অর্থ উপার্জন সম্ভব।
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করি খুব ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদে ভালো আছি। আজকের নতুন টপিকে আপনাকে স্বাগতম! আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে জানতে পারবেন ঘরে বসে আয় করার ৫টি উপায় সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
১। ফ্রিল্যান্সিং
অনেকেই মনে করে ঘরে বসে আয় করাটা অনেক সহজ। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে সহজ বিষয়টি হয়তো, কাজের জন্য আপনাকে অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না।
কিন্তু সফলতা পেতে চাইলে বাইরে গিয়ে করা যেকোন কাজের চেয়ে, ঘরের কাজে আপনাকে বেশি পরিশ্রম করতে হতে পারে। ঘরে বসে আয় করার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে কি কি সার্ভিস প্রদান করা যায়।
তারপরে জানার বিষয় হল কোথায় গিয়ে আপনি সার্ভিসগুলো প্রদান করে আয় করতে পারবেন। ঘরে বসে আয় করার অন্যতম উপায় ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং কী?
যা অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলোর মাধ্যমে করা যায়। বর্তমানে Upwork, Fiverr, Freelancer.com ইত্যাদি মার্কেট প্লেসে সহজেই কাজ পাওয়া যাই।
এই সব মার্কেটপ্লেসে আপনি ঘন্টা হিসেবে অথবা সার্ভিস হিসেবে আপনার কাজের দাম নির্ধারণ করতে পারবেন।
দক্ষতা অণুযায়ী যেকোন বিষয়ের ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস ঘরে বসেই করা সম্ভব, এবং কাজ শেষে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন মাধ্যম অথবা সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে পারিশ্রমিক চলে আসবে।
২। ওয়েবসাইট/ব্লগ
ঘরে বসে আয় করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হল ব্লগিং এবং নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে আয়। তারজন্য আপনাকে প্রথমে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
অনলাইনে নানান ধরনের ফ্রি ব্লগ সাইট রয়েছে, যেখানে আপনি আপনার ব্লগ চালু করতে পারবেন। এছাড়াও বর্তমানে খুব সমান্য টাকা খরচ করেও মোটামুটি ভালো মানের ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়।
ব্লগ অথবা ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জনপ্রিয় বিষয়ে লেখালেখি করে বা চাহিদা সম্পর্ণ বিষয়ের আর্টিকেল পাবলিশ করতে হবে।
ধীরে ধীরে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ভিজিটর বাড়তে থাকলে গুগল অ্যাডন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে আয়ের সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ মাধ্যম হল Google Adsense.
আপনার পাঠকরা গুগলে দেওয়া বিজ্ঞাপণ দেখলে বা বিজ্ঞাপণে ক্লিক করলেই আপনার উপার্জন শুরু হয়ে যাবে। প্রক্রিয়া খুব সহজ কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী।
তবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করতে থাকলে অবশ্যই সফল হওয়া যাবে।
৩। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল অন্য কারোর পণ্য বা সেবা প্রচার করে তার বিক্রি বাড়ানো। এর মাধ্যমে আপনি বিক্রিত পণ্যের দাম থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন পাবেন।
আপনার মাধ্যমে যত বেশি পণ্য বিক্রি হবে, তত বেশি আয় হবে আপনার। এখন প্রশ্ন হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোথায় করা যায়।
এর আসলে নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। কারণ অনলাইন প্লাটফরমের সম্ভাব সকল মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্যের প্রচার বাড়ানোই এর প্রধান উদ্দেশ্য।
সাধরণত ওয়েবসাইটের মালিকেরা তাদের ওয়েব পোষ্টে কোন কোম্পানির পণ্যে বিজ্ঞাপণ জুরে দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকে। ইউটিউবাররা তাদের ভিডিওতে বিভিন্ন পণ্য বা সেবার প্রচার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকে।
এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংও বলা হয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হল Amazon.
৪। গ্রাফিক্স ডিজাইন
বর্তমানে ঘরে বসে আয় করার একটি সেরা উপায় হল গ্রাফিক্স ডিজাইন। ইন্টারনেটের পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে, ভিজুয়াল গ্রাফিক্সের চাহিদাও বাড়ছে।
ইদানিং বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইটগুলোতে, “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” গ্রাফিক্স ডিজাইনারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে, মার্কেটপ্লেস থেকে আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠানের কাজ করেও বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
গ্রাফিক্স ডিজাইন যেহেতু একটি জনপ্রিয় স্কিল তাই এই ক্ষেত্রে কাজ পেতে বেশ প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গ্রফিক্স ডিজাইনের চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং ছাড়াও উপার্জনের আরেকটি ক্ষেত্র আছে।
আর তা হল বিভিন্ন স্ট্রোক গ্রাফিক টেমপ্লেট বিক্রি করা। বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রীক শুভেচ্ছা ডিজাইন, চাকরির সিভি, ইমেইল টেমপ্লেট, বুক কভার ইত্যাদি চাহিদা সম্পন্ন যেকোন গ্রাফিক টেমপ্লেট তৈরি করে স্টক সাইটগুলোতে বিক্রি করা যায়।
Freepik, Shutterstock, iStock সহ বহু ওয়বসাইটে মানসম্পন্ন গ্রাফিক টেমপ্লেট বিক্রি করে যে কোন চাকরির চেয়ে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
৫। ইউটিউবিং
বর্তমানে অনলাইনে ইনকাম করার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল ইউটিউবিং। বিভন্ন দিক থেকেই সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে ইউটিউব সেরা অবস্থানে রয়েছে। তার অন্যতম একটি কারণ হল এই প্লাটফরম থেকে খুব সহজেই আয় করা যায়।
স্মার্টফোন আছে কিন্তু ইউটিউব ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুবই কম আছে। কারণ প্রতিটি স্মার্টফোনে ইউটিউব অ্যাপ আগে থেকেই ইনস্টল করা থাকে। তাই এই প্লাটফরমে দর্শকের কোনো অভাব নেই।
ইউটিউবে কনটেন্ট ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর আপনি চাইলেও কনটেন্ট এর চাহিদা পূরণ করতে পারেন, সেজন্য আপনিও ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন।
যেকোন ধরণের কনটেন্ট দিয়েই ইউটিউব থেকে আয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে বাংলা ভাষায় বহু মানহীন ভিডিওতে ইউটিউব ছয়লাভ হয়ে আছে।
বহু মানুষ আলতু-ফালতু কনটেন্ট আপলোড করেই ইউটিউবে জনপ্রিয় হতে চাই। আবার অনেকে দুই একটি ভিডিও দিয়েই হতাশ হয়ে পড়ে।
একটি কথা মনে রাখবেন কোনকিছু রাতারাতি সফলতা আসে না। সেক্ষেত্রে ইউটিউবেও রাতারাতি সফলতা আসবে না।
এখানে টাকা উপার্জন করা যতটা সহজ, টিকে থাক ততটাই কঠিন। ইউটিউবে সফলতা অর্জন করতে হলে আপনাকে বেশ কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ভিডিও এডিটিং তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া আপনার কনটেন্টের ধরণ অনুযায়ী আপনার আরও কিছু স্কিলের দরকার হতে পারে।
কোন একটি ইউটিউব চ্যানেল যখন এক হাজার সাবস্ক্রাইবার অর্জন করে এবং বিগত এক বছরের মধ্যে চ্যানেলটি চার হাজার ঘন্টার বেশি দেখা হলে তখন ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জনের যোগ্যতা তৈরি হয়।
ইউটিউব অনুমদন দিলে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে উপার্জিত টাকা সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে চলে আসবে।
ভালো কোনো আইটিতে ভর্তি হন
অনেকেই পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জনের আগেই, ঘরে বসে উপার্জনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা আর অভিজ্ঞতা থাকলে কিছুটা দেরি হলেও সফলতা অবশ্যই আসবে।
বাংলাদেশে কাজের দক্ষতা অর্জনের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক অভাব রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আপনি ভালো কোনো আইটিতে ভর্তি হয়ে ভালোভাবে কাজ শিকতে পারবেন।
যদি ভালো কোনো আইটিতে ভর্তি হতে পারেন, তবে আপনি সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে অনলাইনে আয় করার প্রকৃত মাধ্যম খুজে পেতে পারেন।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশে কিছু আইটি সেক্টর রয়েছে যা খুবই সুনাম অর্জন করেছে এদের মধ্যে কয়েকটি নিচে দেওয়া হল-
- Creative IT Institute
- IT Future Institute (ITFI)
- Sofol Freelancer
- CodersTrust Bangladesh
- Eshikhon
সর্বশেষ কিছু কথা – ঘরে বসে আয় করার ৫টি উপায়
ঘরে বসে উপার্জন করার বিষয়টি এমন নয়, যে আজকে শুরু করলাম কাল থেকেই টাকা আসবে। অনলাইনে নানা প্রভোলন ও প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে। তাই সতর্ক হয়ে জেনে বুঝে অনলাইনে আয় করার পথ বেছে নিতে হবে।
রাতারাতি টাকা কামানো যাই এমন সব মাধ্যম এড়িয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে ভালো। কারণ এমন জায়গায় আপনি টেকসই ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন না। সবশেষে একটি কথা মাথায় রাখবেন দক্ষতা থাকলে টাকা আপনা-আপনি আসবে।